বর্ষা কাল, আকাশে মেঘের ঘন কাল ভেলা; দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি নামল ধরাতে। সুমা বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করে তাই এক মুহূর্ত সে দেরি না করে ঘরের বাইরে বের হয়ে বৃষ্টির মাঝে চলে আসল। সুমার মা সুমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে বারণ করল তবুও সে সুনলনা। সুমার একটু শারীরিক সমস্যা আছে , সে বেশিক্ষণ ধরে গোসল করলে তার ঠান্ডা লেগে জর হয়।
বৃষ্টি বর্ষণ হয়েছিল প্রায় বিকেলে। বিকেল গড়িয়ে রাত্রি নেমে আসল আর তার সাথে সুমার হাঁচি এবং কাশি শুরু হল। সুমার মা একটু রাগ করে তাকে বকাবকি করল তারপর বাড়িতে রাখা ঠান্ডা উপশমের ঔষধ খাওয়াল। ঔষধ খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পরে তার হাঁচি থেমে গেল। সুমাদের পরিবারে বেশি সদস্য নেই, সুমা এবং তার বাবা আর মা; এই তিনজন সদস্য। সুমার বয়স আনুমানিক ১৬ বছর হবে কিন্তু তার ছেলেমানুষি বুদ্ধি তখনও যায়নি। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলা ধুলা করতে বেশি পছন্দ করত। সুমার বাবা খুবই গরীব ছিলেন , তার রোজগারে পরিবারটা কোনরকমে চলত । তাদের একটি ছোট্ট বাড়ী ছিল, সে বাড়ীতে দুটি মাত্র ঘর ছিল, একটিতে সুমা থাকত আরেকটিতে তার বাবা মা। সুমাদের বাড়ী ছিল একটি গ্রামে, যেখানে জ্ঞানের আলো সেরকম ভাবে পৌঁছেনি। সুমাদের জীর্ণ কুটিরটি প্রায় প্রতি বছর ঠিক করতে হতো। মাটির দেয়াল আর খড়ের ছাউনি এই দুয়ের সংমিশ্রণে তাদের বাড়ীটি নির্মিত।সুমার বাবার কিঞ্চিত আয়ের মধ্য থেকে তার মা কিছুটা জমা করে রাখত কিন্তু জমা করা অর্থের প্রায় অধিকাংশটাই বিভিন্ন অসুখে খরচ হয়ে যেত। সুমাকে একটি ছেলে পছন্দ করত। সে ছেলেটি তার সাথে আলাপ করত। সুমাও সেই ছেলেটিকে খুব পছন্দ করত। তারা একে অপরের সাথে চিঠি বিনিময় করত। ছেলেটির নাম খাইরুল। সুমার বাবা মা তাদের পছন্দের সম্পর্কে কিছুই জানত না । খাইরুল ছেলেটার বাড়ী আর সুমাদের বাড়ী একই গ্রামে কিন্তু একটু দূরে; সে গ্রামে দুটি পাড়া ছিল, একটির নাম পূর্ব পাড়া আরেকটির নাম পশ্চিম পাড়া। সুমাদের বাড়ী পূর্ব পাড়ায় আর খায়রুলদের বাড়ী পশ্চিম পাড়ায়। খায়রুল একদিন একটি গোলাপ ফুল সংগ্রহ করে সুমার হাতে তুলে দিয়ে বলল , এর মানে তুমি বোঝকি? সুমা উত্তর দিল আমি জানিনা বলে একটু হাসল। খায়রুল বলল এর মানে আমি তোমাকে ভালবাসি। সুমা একটুও দেরি না করে খাইরুলের কাছ থেকে হাসতে হাসতে আসতে আসতে দৌড় দিল। খাইরুল তার দৌড় দেখে একটু হেসে ফেলল। পেরিয়ে গেল একটি বছর। সুমার বাবা মা সুমার বিয়ের জন্য ভাবতে লাগল। সুমার মা সুমার বাবাকে বলল মোয়ের বয়স হয়েছে, তার বিয়ে সম্পর্কে কিছু ভাবছকি? সুমার বাবা বলল হ্যাঁ ভাবছি কিন্তু এই গরীবের ঘরে কে বিয়ে দিবে। সুমার মা বলল , অমাদের সুমা দেখতে সুন্দর তার জন্য পাত্র পাওয়া খুব একটা কষ্ট হবেনা। সুমার বাবা নীরবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল দ্যাখ কেউ যদি প্রস্তাব দেয়। তার কিছুদিন পরে খাইরুল সুমাকে বলল যে, তাদের বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। সুমা খুশি হয়ে বলল, তুমি যেটা ভাল মনে কর, সেটাই কর। খাইরুলের বাবার সুমার বাবার চেয়ে আর্থিক অবস্থা ভাল , তাদের বিঘা চারেক জমি আছে সেই জমিতে তারা ফসল ফলায় । খাইরুল মোটেই বসে থাকার ছেলে নয়, সে দিন মজুর হিসাবে খাটে এবং ভাল আয় করে। খাইরুল তাদের পরিবারের একটি মাত্র সন্তান, সে জমি জমা দ্যাখা সোনা করে এবং দিন মজুর হিসেবে কাজ করে। খাইরুল তার বিয়ের কথা তার বাবা মাকে সরাসরি বলতে পারলনা; সে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে তার বাবা মাকে জানাল। তার বাবা মা সে কথা শুনে খুব খুশি হল এবং তার বন্ধুকে বলল তারা প্রস্তাব নিয়ে সুমাদের বাড়ীতে যাবে। খাইরুলের বন্ধু খাইরুলের বাবা মার কাছ থেকে এই সংবাদটি খাইরুলকে জানাল; খাইরুল তাতে খুব খুশি হলো। পরের দিন বিকেল গড়িয়ে ঠিক সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে খাইরুলের মা সুমাদের বাড়ীতে গেল। সুমার মা বাবা দুজনেই তখন বাড়ীতে ছিল। খাইরুলের মা সুমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করল। সুমার মা একটি পিড়া দিয়ে তাকে বসতে বলল। খাইরুলের মা বলল, আবিদা আমি বেশিক্ষণ বসবনা, একটি কথা তোমাকে বলতে এলাম , তুমি রাজি হবে কিনা তা জানিনা। সুমার মা তাকে বলল কেনরে সাহেরা, কি এমন কথা যে আমি রাজি হবনা? আবিদা বলল তোমার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে নিতে চাই, তুমিকি রাজি আছ? সুমার মা বলল তোমার ছেলে খুব ভাল , রাজি না হয়ে কি পারা যায়। আবিদা বলল তোমারত সম্মতি পেলাম কিন্তু সুমার বাবারত পেলামনা। সুমার বাবা ঘর থেকে সব কথা শুনেছে, তিনি বাইরে এসে আবিদাকে বললেন, আমার এই বিয়েতে সম্মতি আছে । আমি গরীব মানুষ , আমার মেয়েকে অবহেলার পাত্র হিসেবে দেখেননা। খাইরুলের মা বলল আপনার মেয়ে আমার বাড়ীতে আমার মেয়ের মতই থাকবে, সেটা আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা। খাইরুলের মা বলল তাহলে বিবাহের দিন পাকাপাকি করা দরকার; আপনাদের কি মত? সুমার বাবা বলল দিন ক্ষনটির ব্যাপারে একটু ভেবে দেখতে দেন। খাইরুলের মা বলল ঠিক আছে তাহলে আজকে আমি যাই , আপনারা ভেবে আমাকে বলবেন। সুমার বাবা বলল ঠিক আছে। সুমার মা বলল বিহ্যান একটু চা করি। খাইরুলের মা বলল থাক আরেকদিন খাব আজকে যাই। খাইরুলের মা সুমাদের বাড়ী থেকে প্রস্থান করল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি আসল আর সুমার মা-বাবার চিন্তা বাড়তে লাগল। সুমার বাবা বলল, বিয়েতে কিছু টাকাত খরচ হবে, প্রায় জনা দশেক থেকে বিশ জন লোকত খাওয়াতে হবে কিন্তু সেরকম টাকাওত হাতে নাই; কি করা যায়? সুমার মা সুমার বাবাকে বলল চল মৌসুমির বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসি। মৌসুমির কাছে যদি কিছু টাকা থাকে তাহলে সে না করবেনা। মৌসুমি হল সুমার মায়ের আপন বোন তারা মৌসুমিদের গ্রামের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করে। সৃমাদের খালার বাড়ীতে যাতায়াতের খুব সুবিধা ছিল । সুমার মা সুমার বাবাকে বলল কালকে সকালে মৌসুমির বাড়ী যাব। সুমার বাবা তাতে সম্মত হল। রাত্রি ঘনিয়ে আসল , সুমার চোখে ঘুম নেই, সে বিভিন্ন চিন্তা করতে লাগল, সে খাইরুলের চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল। রাত্রি পেরিয়ে গেল, ভোরে সুমার মা সকালের খাবার তৈরি করতে উঠল। গমের রুটি আর আলু ভাজি এই ছিল খাবারের রকম। সুমার বাবা ও সুমা ঘুম থেকে উঠল। সুমার মা সুমাকে বলল আজকে তোর খালার বাড়ী বেড়াতে যাব; খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। সুমা বলল ঠিক আছে। সুমা ও তার বাবা-মা একসাথে খেতে বসল। সকালে খাওয়ার পরে সকলে যাবার জন্য প্রস্তুত হলো। সুমাদের বাড়ি থেকে পিচ ঢালা পথ কিছুটা দূরে। সবাই মিলে কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে মোটর গাড়ীর অপেক্ষায় পিচ ঢালা পথের সামনে এসে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পরে একটি মোটর গাড়ী এসে দাঁড়াল। সুমারা সেই গাড়ীতে উঠে বসল। যে রাস্তা দিয়ে মোটর গাড়ীটি চলছিল সেটা খুব একটা চওড়া নয় , কোন রকমে দুটি মোটর গাড়ী যেতে পারে। সুমারা যে গাড়ীটিতে যাচ্ছিল সেটা খুব জোরে চল ছিলনা কিন্তু আস্তে— আস্ত— তার গতি বাড়তে থাকে। পথের মাঝে রাস্তাটির কিছুটা বাঁক ছিল সেই বাঁকে অপরদিক থেকে আসা গাড়ী দেখা যেতনা। সেই বাঁকে সুমাদের গাড়ী ও অপর দিক থেকে আসা গাড়ীটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, করুন একটি দৃশ্য; চারিদিক থেকে গ্রামবাসীরা এসে জমা হয় এবং তারা যাত্রীদেরকে বের করতে সাহায্য করে এবং নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সুমারা যে গাড়ীতে ছিল সে গাড়ীর অনেক যাত্রী মৃত্যু বরন করে আর সুমার বাবা-মা ও মৃত্যু বরন করেন। মোটর গাড়ী সংঘর্ষের কারণে রুমার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়, আঘাতের কারণে সুমার দুই চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। সুমা এখন অন্ধ। খাইরুলের মা সুমার সাথে খাইরুলের বিয়ে দিতে চায়না। সুমা অন্ধ হবার পরও খাইরুল সুমাকে ভালবাসত। সুমার জীবনের এই আঁধার কালো রাত্রি কিভাবে আলোয় ভরিয়ে দিবে সেটা নিয়ে খাইরুল চিন্তিত।
১৫ মার্চ - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪